সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সালফদের মানহাজ


সালফদের মানহাজ
আলোকপাত
প্রশ্ন: কোন কোন ব্যক্তি আক্বীদায়ে সালাফ ও মানহাজে সালাফের মধ্যে পার্থক্য করে থাকেন। ফলে দেখা যায় তারা সালাফী আক্বীদাসম্পন্ন হলেও প্রচলিত বিভিন্ন মতবাদের অনুসারী দলের সাথে সম্পৃক্ত, অথচ কার্যক্ষেত্রে মতবাদগুলোর সাথে সালাফে ছালেহীনের মানহাজের বৈপরিত্য রয়েছে। প্রশ্ন হল, সালাফী মানহাজ বাস্তবায়ন করার জন্য আক্বীদায়ে সালাফের সাথে মানহাজে সালাফ অনুসরণ করাও কি সমভাবে অপরিহার্য?
-আব্দুর রশীদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। 

উত্তর: আক্বীদায়ে সালাফ ও মানহাজে সালাফ পৃথক কিছু নয়। দু’টিরই অনুসরণ করা অপরিহার্য। ব্যবহারিক অর্থে মানহাজ আক্বীদার চেয়ে ব্যাপকতর (আম) শব্দ। আক্বীদা হল অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাসকেন্দ্রিক, আর মানহাজ হল দৃশ্যমান জগতকেন্দ্রিক। মানহাজ শব্দটি আক্বীদা (মৌলিক বিশ্বাস), সুলূক (আচরণবিধি), আখলাক (চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য), মু‘আমালাত (পারস্পরিক সম্পর্ক ও ব্যবসায়িক লেনদেন) অর্থাৎ একজন মুসলমানের বাস্তব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপকে পরিবেষ্টন করে। আর আক্বীদা হল ঈমান ও কালেমায়ে শাহাদতের ভিত্তিমূল এবং এ দু’টির মধ্যেই আক্বীদার সীমানা পরিব্যাপ্ত। সুতরাং বলা যায়, আক্বীদা ও মানহাজ শব্দদ্বয় একই জীবনব্যবস্থার দু’টি পৃথক শাখার নাম, একটি বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত, অপরটি আমলের সাথে সম্পৃক্ত। ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখে একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই বা করা সম্ভব নয়।
আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী এ সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং তাঁর ইবাদতের ক্ষেত্রে মানহাজ ও আক্বীদার সমঅবস্থান ও পৃথক অবস্থান উভয়ই বিদ্যমান। সাধারণভাবে আক্বীদা মানহাজের চেয়ে সুনির্দিষ্ট ও স্বল্প পরিসরের শব্দ। ওলামায়ে কেরাম আক্বীদা শব্দটিকে ‘তাওহীদের ইলম’-এর সাথে সংযুক্ত করেছেন, যা ইসলামের মৌলিক বিষয়বস্ত্ত। আর মানহাজ শব্দটি আক্বীদা বা তাওহীদের চেয়ে ব্যাপকার্থক শব্দ। কিন্তু যারা এখানে পার্থক্য করতে চাইছেন তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তারা মূলত দাওয়াতের ময়দানে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চান যা সালাফে ছালেহীনের নীতিবিরোধী, যেমন তারা হয়ত তথাকথিত গণতন্ত্র বা সামাজিক ন্যায়বিচার বা অনুরূপ কিছু প্রতিষ্ঠার কথা বলবেন। যার অর্থ তারা অবিশ্বাসী, কাফেরদের নীতি-পদ্ধতিকে অনুসরণ করার অনুমতি চান। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হল, সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের জন্য যে শরী‘আত দান করেছেন তার মাধ্যমে আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্য করা এবং কাফিরদের নীতি-বিধানের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিঃশেষ হয়ে গেছে। সেসব বিধান হয়ত কাফিরদের জন্য উত্তম। কেননা তাদের এমন কোন শরী‘আত নেই যার দ্বারা তারা পরিচালিত হবে। কিন্তু কোন মুসলিমের জন্য তা অনুসরণ করার বৈধতা নেই। সুতরাং একজন মুসলিমের জন্য সালাফে ছালেহীনের আক্বীদা পোষণ করা যেমন অপরিহার্য কর্তব্য, তেমনি তাদের অনুসৃত মানহাজ অনুসরণ করাও সমভাবে অপরিহার্য (মাজাল্লাতুছ ছলাহ, ২২তম সংখ্যা)।
অনুরূপই অনেকে বলে থাকেন যে, যেহেতু আমাদের আক্বীদা এক সেহেতু আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, হোক না আমাদের মানহাজ ভিন্ন। এর জবাব কি হবে? শায়খ তারাহীব আদ-দোসরী এর উত্তরে বলেন, বিষয়টি সাধারণ। মূলত আক্বীদা ও মানহাজ একই জিনিস; বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। যার মানহাজ সঠিক তার আক্বীদাও অবশ্যই সঠিক। যার মানহাজে গলদ রয়েছে তার আক্বীদাতেও গলদ রয়েছে। উদাহরণত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হল, আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলীকে অবিকলভাবে সত্যায়ন করা এবং একজন পাপীকে শুধুমাত্র তার পাপের জন্য কাফির সাব্যস্ত না করা। এ বিষয়টি আক্বীদা ও মানহাজ উভয়ের সাথেই সম্পৃক্ত। সুতরাং এক্ষেত্রে কারো মানহাজ যদি ভিন্ন হয় তাহলে এটা বলার উপায় নেই যে, তার আক্বীদা বিশুদ্ধ এবং কুরআন-সুন্নাহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অনূরূপভাবে সেই ব্যক্তি যে একজন ছূফী এবং সে ইবাদতে আল্লাহ্র সাথে এমন কাউকে শরীক করে, যা আল্লাহ তার জন্য সিদ্ধ করেননি। সুতরাং কেউ যদি সুন্নী হয় তবে সে ছূফী হতে পারে না, আবার ছূফী হলে সুন্নী হতে পারে না। অর্থাৎ একজন ছূফীর মানহাজ সুন্নী থেকে পৃথক হওয়ার সাথে সাথে আক্বীদাও পৃথক। সুতরাং আক্বীদার মিল থাকলেই যথেষ্ট, মানহাজের ভিন্নতা কোন সমস্যা নয়-এ চিন্তুা ভুল এবং বাস্তবতার বিপরীত (মানহাজ ডটকম)।
সুতরাং ইসলামের সত্য ও সঠিক রূপকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করতে সালাফে ছালেহীনের আক্বীদা ও মানহাজ উভয়টিই সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে। এটাই সঠিক ও চিরন্তন নীতি। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রেরিত পথ অনুসরণ ও তার উপর অটল থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন!!
প্রশ্ন: আরবীতে العام ও السنة শব্দ দু’টি বছর বা সাল অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাক্যের মধ্যে এদের ব্যবহারবিধি কিরূপ হবে?
-আসাদুয্যামান
নওদাপাড়া মাদরাসা, রাজশাহী।
উত্তর: শব্দ দু’টি একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও উভয়ের মাঝে সম্পর্কটি হল عام وخاص مطلق। অর্থাৎ السنة শব্দটিعام (সাধারণ অর্থজ্ঞাপক) এবং العام শব্দটি خاص (সীমিত ও নির্দিষ্ট অর্থজ্ঞাপক)। যেমন- الكل (সমগ্র) ও الجمع (সমগ্র) শব্দদু’টি। প্রথমটি দ্বারা কিছু অংশ শামিল করা বুঝায় আর দ্বিতীয়টি দ্বারা যাবতীয় অংশকে শামিল করা বুঝায়। অর্থগতভাবে العام শব্দটি أيام (দিনসমূহ)-এর বহুবচন এবং السنة শব্দটি شهور (মাসসমূহ)-এর বহুবচনসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয় عام الصيف وعام الشتاء وعام الفيل (গ্রীষ্মকাল, শীতকাল বা হাতির বছর) এবং سنة مائة وسنة خمسين (১০০ সাল বা ৫০ সাল)। পবিত্র কুরআনে শব্দদ্বয়ের ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রেখে ভাষাবিদগণ অনুরূপ পার্থক্য করেছেন। এছাড়া কুরআনে السنة দ্বারা কষ্ট ও পরিশ্রমপূর্ণ সময়কাল (ইউসুফ ৪৭) এবং العام দ্বারা স্বস্তি ও প্রশান্তিপূর্ণ সময়কাল বুঝানো হয়েছে (ইউসুফ ৪৯)। সুতরাং শব্দদু’টি interchangeably ব্যবহার না করে স্থানবিশেষে পৃথকভাবে ব্যবহার করাই সমীচীন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তিন শ্রেণীর লোক দ্বারা সর্বপ্রথম জাহান্নাম উদ্বোধন

♪♪তিন শ্রেণীর লোক দ্বারা সর্বপ্রথম জাহান্নাম উদ্বোধন করা হবে। যথাঃ (ক) শহীদ। (খ) আলেম এবং (গ) দানবীর। ★হাদিস: তিন শ্রেণীর লোক সর্বপ্রথম জাহান্নামে যাবেঃ প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি, নবীজী বলেন:কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাদের বিচার করা হবে, শাহাদত বরণকারী একজন লোক, তাকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ প্রদত্ত্ব যাবতীয় নেয়ামত সম্পর্কে জ্ঞাত করা হবে সে সব নেয়ামতকে চিনে বা মেনে নেবে। তখন তাকে বলা হবে: এসব নেয়ামতের পরিপ্রেক্ষিতে তুমি কি কি আমল করেছ? বলবে: আপনার তরে লড়াই-জিহাদ করেছি এবং শহীদ হয়ে গিয়েছি। বলা হবে: তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি লড়াই করেছ এজন্য যে, লোকেরা তোমাকে বীর-বাহাদুর বলবে। তাতো বলা হয়েছে। অত:পর তার ব্যাপারে রায় ঘোষণা করা হবে এবং তাকে চেহারার উপর ভর দিয়ে টেনে নিয়ে (যাওয়া হবে এবং) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। →দ্বিতীয় পর্যায়ে, আলেম ব্যক্তি যে নিজে দ্বীনী ইলম শিক্ষা গ্রহণ করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কোরআন পড়েছে। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং প্রদত্ত নেয়ামত সম্পর্কে জ্ঞাত করা হবে। সে সব নেয়ামত...

ভ্রান্ত আলেম

ভ্রান্ত আলেম ভ্রান্ত আলেমঃ- নবি(স) বলেন,আমি আমার উম্মতের একটি বিষয়কে দজ্জালে চেয়ে ও বেশী ভয় করি। আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল সেটা কি? তিনি বল্লেন,বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট আলেম(সহি মুসলিম:৬,৭ মুসনাদে আহমদ:২১৬২১,২১৬২২ তাবরানী:৭৬৫৩)। আলেমগন(ভাল) ইসলামের পাহরাদার বল্লেও, দুর্ভাগ্য যে বর্তমানে কিছু লোক (পীর নিয়ন্ত্রিত) মাদ্রাসায় সাজেশান পড়ে আলেম সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে, কিন্তু তারা কুরআন সম্পূর্ণ পড়ে না,বিধায় আমাদের সমাজে পথভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত আলেম বেড়ে গেছে। তাদের অজ্ঞতায় সৃজিত জাল-যঈফ হাদিসের জন্য সাধারণ মুসলিম শির্ক ও বিদাআত চিনতে পারছেন না। এরাই বর্তমানে বলে বেড়ায় "ধর্ম বুঝা কঠিন, মাদ্রাসা না পড়লে কোন ভাবেই ধর্ম জানা যায় না তারচে তারা যা বলে তা অন্ধ ভাবে অনুসরণ করতে"। প্রকৃত পক্ষে- এটি সহজ ও দলিল ভিত্তিক ধর্ম।এটা মানতে কুরআন ও সুন্নাহ(in to to) অনুসরণ করতে হয়। কোন পীর,ঈমাম কিংবা আলেম এর স্বপ্ন,ইচ্ছা,গনতন্ত্র, ভাল লাগা, না লাগার উপর ইসলাম নির্ভর করে না। আল্লাহ্‌ বলেন, আলেমদের অন্ধ অনুসরণ করা হারাম(সুরা নাহল:১৬/৪৩,সুর আ"রাফ:৭/৩, সুরা আহযাব:৩৩/৬৭) [Mahbubul ...

হকপন্থী দল কারা ?”

হকপন্থী দল কারা ?” সওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হকপন্থী দল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, "চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হকের উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে ।” (সহীহ মুসলিম ‘ইমারত’ অধ্যায়-৩৩, অনুচ্ছেদ-৫৩, হা/১৯২০; ফাৎহুল বারী হা/৭১ ‘ইল্ম’ অধ্যায় ও হা/৭৩১১-এর ভাষ্য ‘কিতাব ও সুন্নাহকে, ‘আঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়; আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ)-কে ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত হক-এর উপরে একটি দল টিকে থাকবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, -“তারা যদি ‘আহলে হাদীস’ না হয়। তাহ’লে আমি জানি না তারা কারা ?” (তিরমিযী হা/২১৯২; মিশকাত হা/৬২৮৩-এর ব্যাখ্যা; ফাৎহুল বারী ১৩/৩০৬ পৃঃ, হা/৭৩১১-এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০-এর ব্যাখ্যা; শারফু আসহাবিল হাদীস পৃঃ ১৫।) ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকিম(মৃঃ ৪০৫ হিঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এই মন্তব্য করে ভালোই করেছেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকার সেই বিজয়ী দলটি হল ‘আসহাবুল হাদিস’। (ম...