সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আহলে হাদীস – কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে বিশদ পর্যালোচনা

আহলে হাদীস – কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে বিশদ পর্যালোচনা

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ২০, ২০১৫

shariful islam

>>>> আহলে হাদীস – কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে বিশদ
পর্যালোচনা <<<<
>>>> আহলে হাদীস এর অর্থ <<<<
আহলে হাদীস আরবী ভাষা আহলুল হাদীস থেকে এসেছে আহলুল
শব্দের অর্থ বংশধর বা অনুসারী।আর হাদীস অর্থ
কথা বা বানী। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ ও রাসুলের
কথা বা বানী কে হাদীস বলা হয়। আল্লাহ নিজে কোরআন
মাজীদে তার কথা কে হাদীস বলেছেন ।
হাদীছ শব্দ দিয়ে আল্লাহ কুরআনকেও বুঝিয়েছেন। হাদীস
(ﺚﻳِﺪَﺣ) এর শাব্দিক অর্থ: কথা, বাণী, কথাবার্তা, আলোচনা,
কথিকা, সংবাদ, খবর, কাহিনী। এর বহুবচন ﺚﻳِﺩﺎَﺣَﺃ হাদীস
(ﺚﻳِﺪَﺣ) শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে নতুন, নবীন, আধুনিক,
নব্য, সাম্প্রতিক। হাদিসের পারিভাষিক অর্থ: রসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কর্ম, সম্মতি,
চারিত্রিক গুণবলীকে হাদিস বলা হয়।
আল্লাহ সুবহানুতালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন- আর (হে নবী)
অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। আল-কালাম, ৬৮/৪
আল্লাহ সুবহানুতালা পবিত্র কুরআনে তাই বলেছেনঃ- আল্লাহ
অবর্তীণ করেছেন সর্বোত্তম (হাদীস) বাণী সম্বলিত
সামঞ্জস্য পূর্ণ একটি কিতাব যা পুনরাবৃত্তি হয়,
যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের
গা এতে শিউরে ওঠে তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর
স্মরণে প্রতি বিনম্র হয়ে যায়; এটিই আল্লাহর হেদায়াত,
তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হেদায়াত দান করেন আর
আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শক
নেই। সূরা আয-যুমার, ৩৯/২৩।
অতএব, কুরআন মনগড়া হাদীস নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ
সুবহানুতালা পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ-
ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻗَﺼَﺼِﻬِﻢْ ﻋِﺒْﺮَﺓٌ ﻷﻭﻟِﻲ ﺍﻷﻟْﺒَﺎﺏِ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﺪِﻳﺜًﺎ ﻳُﻔْﺘَﺮَﻯ
ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺗَﺼْﺪِﻳﻖَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﺗَﻔْﺼِﻴﻞَ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻭَﻫُﺪًﻯ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً
ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ
অবশ্যই তাদের বৃত্তান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমানদের
জন্য শিক্ষা, এটা (কুরআন) কোন মনগড়া (হাদীস) বাণী নয়,
বরং পূর্ববর্তী কিতাবের
সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ আর
হেদায়াত ও রহমত ঐসব লোকদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন
করে। ইউসুফ, ১২/১১১
অধিকন্তু আরও বলা যায় যে, যারা হাদীস
তথা কুরআনকে মিথ্যা মনে করবে তাদেরকে আল্লাহ
শাস্তি দিবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানুতালা পবিত্র
কুরআনে বলেছেন:
ﻓَﺬَﺭْﻧِﻲ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﻜَﺬِّﺏُ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺳَﻨَﺴْﺘَﺪْﺭِﺟُﻪُﻡْ ﻣِﻦْ ﺣَﻴْﺚُ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ

কাজেই আমাকে ছেড়ে দাও এবং যারা এই (হাদীসকে)
বাণীকে মিথ্যারোপ করবে;
তাদেরকে আমি ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে,
তারা জানতেও পারবে না। আল-কালাম, ৬৮/৪৪
সুতারাং, উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,
হাদীস বললে, আল্লাহর বাণী ‘কুরআন’ ও রসূলের বাণী ‘হাদীস’
উভয়েই বুঝায়। আর আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ
করতে হবে। তাহলে আমরা বলতে পারি যে, আহলে হাদীস
মানে কি? আহলে হাদিস বা আহলুল হাদিস শব্দের অর্থ
হাদিসের ধারক, হাদিসের মতাবলম্বী, হাদীসের অনুসারী।
যারা কুরআন ও সহীহ হাদীসের একনিষ্ট অনুসারী তারাই হল
আহলে হাদীস বা আহলুল হাদীস। আহলুল হাদীস এর অর্থ:
সুন্নাহর অপর নাম হাদীস।
>>>> যঈফ ও জাল হাদীস <<<<
মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারী জাহান্নামী। সহীহ ও হাসান
হাদীস ছাড়া জাল বা জঈফ হাদীস আমল করার জন্য
বর্ণনা করা যাবে না। তবে বর্জন করার জন্য জঈফ ও জাল
হাদীস জানা দরকার। জঈফ হাদীস রাসূলের সূন্নাহর
ব্যাপারে কিছু অনুমান-ধারণার সৃষ্টি করে মাত্র। আবূ
হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
" ﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺍﻟﻈَّﻦَّ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻈَّﻦَّ ﺃَﻛْﺬَﺏُ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚ "
তোমরা ধারণা-অনুমান থেকে বেঁচে থাক কারণ ধারণা-
অনুমান সর্বাপেক্ষা মিথ্যা কথা। সহীহুল বুখারী: ৬০৬৬,
৬৭২৪, সহিহ মুসলিম: ৬৪৩০
আর জাল বা মিথ্যা হাদিস যা স্পষ্ট রাসূলের কথা নয়।
সুতরাং হাদিস যাচাই করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ﻛَﻔَﻰ ﺑِﺎﻟْﻤَﺮْﺀِ ﻛَﺬِﺑًﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﺤَﺪِّﺙَ ﺑِﻜُﻞِّ ﻣَﺎ ﺳَﻤِﻊَ
কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে,
সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়। (মুসলিম)
আল্লাহ বলেন-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﻥْ ﺟَﺎﺀَﻛُﻢْ ﻓَﺎﺳِﻖٌ ﺑِﻨَﺒَﺈٍ ﻓَﺘَﺒَﻴَّﻨُﻮﺍ ﺃَﻥْ ﺗُﺼِﻴﺒُﻮﺍ ﻗَﻮْﻣًﺎ
ﺑِﺠَﻬَﺎﻟَﺔٍ ﻓَﺘُﺼْﺒِﺤُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻢْ ﻧَﺎﺩِﻣِﻴﻦَ
হে মু’মিনগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন
সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও,
যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত
না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য যেন অনুতপ্ত
না হও। হুজরাত, ৪৯/৬
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ﺇِﻥَّ ﻛَﺬِﺑًﺎ ﻋَﻠَﻲَّ ﻟَﻴْﺲَ ﻛَﻜَﺬِﺏٍ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺣَﺪٍ ﻣَﻦْ ﻛَﺬَﺏَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣُﺘَﻌَﻤِّﺪًﺍ،
ﻓَﻠْﻴَﺘَﺒَﻮَّﺃْ ﻣَﻘْﻌَﺪَﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
“নিশ্চয় আমার উপর মিথ্যা বলা, কারো উপর মিথ্যা বলার মত
নয়, যে আমার উপর মিথ্যা বলল সে যেন তার
ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়”। বুখারি: ১২৯১
ﻻَ ﺗَﻜْﺬِﺑُﻮﺍ ﻋَﻠَﻲَّ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻛَﺬَﺏَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﻠْﻴَﻠِﺞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ
তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না কারণ যে আমার উপর
মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামে যাবে। সহীহুল বুখারি:
১০৬।
ﻣَﻦْ ﻛَﺬَﺏَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺒَﻮَّﺃْ ﻣَﻘْﻌَﺪَﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার
ঠিকানা বানিয়ে নেয়। বুখারি, হাদিস: ১০৭
ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻤَّﺪَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻛَﺬِﺑًﺎ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺒَﻮَّﺃْ ﻣَﻘْﻌَﺪَﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
যে ব্যাক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি,
সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ বুখারী:
১০৯
ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻧَﺲٌ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻴَﻤْﻨَﻌُﻨِﻲ ﺃَﻥْ ﺃُﺣَﺪِّﺛَﻜُﻢْ ﺣَﺪِﻳﺜًﺎ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ (ﷺ ( ﻗَﺎﻝَ
" ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻤَّﺪَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻛَﺬِﺑًﺎ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺒَﻮَّﺃْ ﻣَﻘْﻌَﺪَﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এ
কথাটি তোমাদেরকে বহু হাদীস
বর্ণনা করতে আমাকে বাধা দেয় যে, রাসূলুল্লাহ্
(ﷺ)বলেছেনঃ যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ
করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
[বুখারী : ১০৮, মুসলিম]
আল্লাহ সুবহানুতালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﻇْﻠَﻢُ ﻣِﻤَّﻦِ ﺍﻓْﺘَﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﺬِﺑًﺎ ﻟِﻴُﻀِﻞَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻋِﻠْﻢٍ ﺇِﻥَّ
ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ
সুতরাং তার চেয়ে অধিক যালিম কে, যে মানুষকে বিভ্রান্ত
করার জন্য বিনা দলিলে আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়?
নিশ্চয় আল্লাহ যালিম লোকদেরকে হিদায়েত করেন না।
আনআম, ৬/১৪৪
রাসূলের নামে মিথ্যা হাদীস মানুষ বর্ণনা করছে, সম্মানিত
মুহাদ্দিসগণ কোনটি রাসূলের হাদীস আর কোনটি রাসূলের
হাদীস নয়, তা পৃথক করেছেন। তাই মিথ্যা ও দুর্বল হাদীছ
ত্যাগ করে সহীহ ও হাসান হাদিসগুলো আমরা মানব।
>>>> আহলে হাদীস নাম কেন <<<<
সাহাবা ও তাবেঈন কতৃক পৃথিবীর যে সকল প্রান্তে মুসলিম
উপনিবেশ সুমহ স্হাপিত হয়েছিল তার অধিবাসী সকলেই
আহলে হাদীস ছিলেন।ইসলাম আহলে হাদীস তরিকার
নামান্তর মাত্র ছিল বলে স্বতন্ত্রভাবে তখন আহলে হাদীস
রূপে অভিহিত হবার কোন প্রয়োজন ছিল না।বিশেষতঃহিন্দ
ের সকল মুসলিম উপনিবেশে ইসলামের প্রথম আবির্ভাবের
সময় হতে ৩য় শতাব্দী পর্যন্ত আহলে হাদীস গনেরই পূর্ণ
প্রভাব ছিল । পরবর্তীকালে ইসলাম
জগতে ফিরকাবন্দি প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্ব পর্যন্ত
মুসলিমগনের মাযহাব ছিল আহলে হাদীস।
>>>> আহলে হাদীসের সংজ্ঞা <<<<
অধুনা মুসলিম বিশ্বের একজন সফল শিক্ষক ও বিশিষ্ট
শিক্ষাবিদ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ
শিক্ষা অনুষদের আস সুন্নাহ বিভাগের প্রধান ড. রাবী বিন
হাদী উমাইর আল মাদখালী। তিনি তার প্রসিদ্ধ
পুস্তিকা মাকানাতু আহলিল হাদীস - এ প্রশ্ন রাখছেন, আহলুল
হাদীস কারা? এবং পরপরই নিজে জবাব দিচ্ছেন, যার অর্থ
হচ্ছে- ‘আহলে হাদীস তারা, যারা আল কিতাব ও
সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ এবং এ দুটির একনিষ্ঠ ও
নিরবচ্ছিন্ন অনুসরণে এবং আকায়েদ ও ইবাদত, ব্যবহার
বিধি ও চারিত্রিক আচার আচরণ, সমাজ ব্যবস্থা ও
শাসনবিধি যাই হোক না কেন সকল ক্ষেত্রে সকল কথা ও সকল
পথনির্দেশের চাইতে আল-কুরআন ও সহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহকে প্রাধান্য ও
অগ্রাধিকার দিয়ে সাহাবা ও তাবেঈনদের পথ ধরে চলে।
যারা আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যা অবর্তীণ করেছেন
এবং তাঁর প্রতি যেসব প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছেন দীনের
সেই মৌল নীতি এবং তার শাখা প্রশাখায় দৃঢ়পদ ও
সুপ্রতিষ্ঠিত, এবং যারা (মুক্তি ও সাফল্যের) এই
পথে লোকদের আহ্বান জ্ঞাপনে সতত প্রস্তুত, সচেষ্ট ও
সংকল্পবদ্ধ, যারা মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া ইলমের ধারক ও
বাহক, যারা বাড়াবাড়ি কারী চরমপন্থিদের কুরআন ও
হাদীসের ভাষা ও ভাবগত অর্থের পরিবর্তন
প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেয় এবং বাহিল পন্থীদের নব নব
সংযোজন ও জাহিলদের ভুল ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে।
আহলে হাদীস তো তারাই যারা সর্বকালে ও সর্ব
দেশে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় সর্তক দৃষ্টি রাখে সেই সব
ফিরকার প্রতি যারা ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছ যেমন
জাহমিয়া, মুতাযিলা, খারেজী, রাফেযী, মুরজিঈ,
কাদারী এবং প্রত্যেক সেই দল যারা আল্লাহর প্রদর্শিত পথ
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ
করে চলেছে আল্লাহর রাহে কর্তব্য পালনে কোন নিন্দুকের
নিন্দা তাদেরকে প্রভাবিত করে না।তারাই হচ্ছে সেই দল
যাদের প্রশংসা এবং গুণকীর্তন করেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এ অমর বাণীতে:
“আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি দলের অস্তিত্ব চিরকাল
বিদ্যমান থাকবে যারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত
থাকবে এবং যারাই তাদের বিরুদ্ধাচরণ
বা তাদেরকে বিড়ম্বিত ও লাঞ্ছিত করতে তৎপর হোক না কেন
প্রলয়কাল পর্যন্ত তাদের কোন অনিষ্টই
করতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম ৩/১৫২৩)।
তারাই তো সফলকাম মুক্তি প্রাপ্তদের দল
যারা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে সেই মত ও পথের উপর
যে মত ও পথের উপর কায়েম ছিলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীবৃন্দ,
যাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং চিহ্নিত করেছেন তাঁর এই
বাণীর মাধ্যমে “এই উম্মত তিয়াত্তর ফিরকায়
বিভক্তি হবে আর সাবই জাহান্নামে শুধু একটি মাত্র দল
ব্যতিরেকে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
কোনটি সেই ভাগ্যবান দল? তিনি বললেন, সেই দল
যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে সেই মত ও পথের
যাতে আমি এবং আমার সাহাবা কায়েম রয়েছি।” (তিরমিযী,
৪/৪২০, ইবনে মাজাহ ১/৪-৫)
তিনি আরও বলেন, “আমি অতিরঞ্জিত কোন বক্তব্য
উপস্থাপনা বা নিছক কোন দাবী পেশ করছি না।
বরং আমরা তাই বলছি যা সত্য, যা বাস্তব। আল কুরআন ও
সুন্নাহর সুস্পষ্ট ‘নাস’ এ দাবীর সত্যতার সাক্ষ্য দান করছে,
ইতিহাস এর সাক্ষ্য বহন করছে আর এর
সাক্ষী হচ্ছে হচ্ছে স্বয়ং তাদের (নিজেদের) উক্তি,
জীবনধারা ও রচিত গ্রন্থাবলী।” ( তথ্যসূত্র: মাকানাতু
আহলিল হাদীস, পৃষ্ঠা ৪, ৫ ও ৬, অভিভাষণ-প্রফেসর ড.
মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহ) ২২৪ ও ২২৫ পৃষ্ঠা)।
✔ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ)- কে ‘ক্বিয়ামত
পর্যন্ত হক-এর উপরে একটি দল টিকে থাকবে’ মর্মে বর্ণিত
হাদীছের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায়
বলেন,
ﻫُﻢْ ﺇِﻥْ ﻟَّﻢْ ﻳَﻜُﻮْﻧُﻮْﺍ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳْﺚِ ﻓَﻼَ ﺃَﺩْﺭِﻯْ ﻣَﻦْ
‘তারা যদি ‘আহলেহাদীস’ না হয়।
তাহ’লে আমি জানি না তারা কারা’? [তিরমিযী হা / ২১৯২;
মিশকাত হা/৬২৮৩-এর ব্যাখ্যা; ফাৎহুল বারী ১৩/৩০৬ পৃঃ,
হা/৭৩১১-এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছহীহাহ হা / ২৭০; শারফু
আসহাবিল হাদীস পৃঃ নং: ১৫।]
✔ শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী (৪৯১-৫৬১ হিঃ) বলেন,
‘অতঃপর ফির্কা নাজিয়া হ’ল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।
আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্য কোন নাম নেই
একটি নাম ব্যতীত। সেটি হ’ল ‘আহলুল হাদীছ’।[আব্দুল
ক্বাদির জীলানী, কিতাবুল গুনিয়াহ ওরফে গুনিয়াতুত
ত্বালেবীন (মিসর: ১৩৪৬ হিঃ) ১/৯০ পৃষ্ঠা।]
>>>> আহলে হাদীসদের বৈশিষ্ট্য <<<<
১। একমাত্র অনুসরনীয় ইমাম ও নেতা হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ
(ﷺ)।
২। সকল প্রকার সমস্যার সমাধানে কোরআন ও সহী হাদীস
অনুসারে করতে হবে।
৩। কোরআন ও সহী হাদীসে না পেলে সাহাবাগনের সিদ্ধান্ত
গ্রহন করতে হবে।
৪। সাহাবাগনের সিদ্ধান্তে না থাকলে সে সকল
বিষয়ে কোরআন ও হাদীস কে ভিত্তি করে আলেমগন ইজতিহাদ
(শরীয়ত গবেষণা) করবেন, কোরআন বা সহী হাদীস
বিরোধী ইজতিহাদ হলে চলবে না।
৫। কোনভাবেই ধর্মীয় ব্যাপারে দলিল ছাড়া কারো উক্তির
অনুসরন করা চলবে না।
>>>> আহলে হাদীস কারা <<<
যারা কোরআন ও সহী হাদিসকে সরাসরি অনুসরন করে তারাই
আহলে হাদিস।এই আহলে হাদীসদের পরিচয়
জানতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে সাহাবায়ে কিরাম
তাবেঈন,তাবে তাবেঈন ও ৪ মাযহাবের ইমাম গন
আহলে হাদীস পথ ও মতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আবু
হানীফা (রহ), ইমাম মালেক (রহ), ইমাম শাফেয়ী (রহ),
ইমাম আহমাদ (রহ) মাযহাব সৃষ্টির আগে তথা ইসলামের
স্বর্ন যুগে ৪ (চার) মাযহাব ছিল না। ইমাম আবু
হানিফা (রহ:)এর বক্তব্যের মাধ্যমে এর সত্যতা প্রমান
পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, “যদি দলীল প্রকাশ হযে যায়
তাহলে তোমরা তদানুযায়ী কথা বলবে। (তথ্যসূত্র: রদ্দুল
মুহতার, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং:-৪৭)।” তখনকার মুসলিমগন কোরআন
ও সুন্নাহর উপর কায়েম ছিলেন বলে তারা আহলে হাদীস
নামে পরিচিত ছিল।
>>>> মুসলিম কারা এবং মুসলিম কাকে বলে <<<<
কোরআন ও সহী সুন্নাহ বা ইসলাম যাদের মাযহাব তারাই
আহলে হাদীস। তাদের আরেকটি পরিচয় হল মোহাম্মদ (ﷺ) এর
সুন্নতের উপর প্রতিষ্টিত বলে এদের আরেক নাম আহলে সুন্নত
ওয়াল জামাত । এ প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিতভাবে বলা যায়
যে, আহলে হাদিস/সালাফী কোনো মাজহাব বা দলের নাম নয়
বরং এটা হচ্ছে গুন বা বৈশিষ্ট্য। একমাত্র কোরআন ও
রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সহীহ সুন্নাহর অনুসারীদেরকেই
আহলে হাদীস বলে। আর এরাই প্রকৃত মুসলিম
না বরং আত্মসমপর্ণকারী মুসলিম।
সূরা হা-মীম সাজদাহ – ৩৩নং আয়াতের আলোকে ব্যাখ্যাঃ-
পবিত্র কুরআনে সূরা হা-মীম-সিজদায় মুসলিম
সম্বন্ধে বলতে গিয়ে আল্লাহ সুবহানুতালা বলেছেনঃ-
'‘তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার, যে ব্যক্তি আল্লাহর
দিকে আহবান করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং বলে,
আমি একজন মুসলিম (আমি একজন আজ্ঞাবহ)’' (হা-মীম সাজদাহ
- ৩৩) ।”
হা-মীম-সিজদার ৩৩নং আয়াত অনুযায়ী মুসলিম এর ব্যাখ্যায়
বলা যায় যে, কোনো ব্যাক্তির আল্লাহকে রব
হিসাবে স্বীকার করে সোজ পথ তথা আল্লাহ এবং তাঁর
রাসূলকে যে পথের কথা বলেছেন সেটাকেই
বুঝানো হয়েছে তথা আত্মসমপর্ণকারী মুসলিমের কথাই
বুঝানো হয়েছে এবং তারাই এ কাজ করে যারা একমাত্র কুরআন
ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সহীহ সুন্নাহর অনুসারী। আরও
বিস্তারিতভাবে বলা যায় যে, যারা আল্লাহর হাদীস ‘কুরআন’
ও রসূলের সহীহ হাদীসের একনিষ্ট অনুসারী তারাই হল
আহলে হাদীস বা আহলুল হাদিস। আবার সুন্নাহর অপর নাম
হাদীস তাই যারা আহলুস্সুন্নাহ তারাই আহলুল হাদীস
এবং এরাই প্রকৃতপক্ষে আত্মসমপর্ণকারী মুসলিম। এখন প্রশ্ন
হলো মুসলিম কারা এবং মুসলিম কাকে বলে?
নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করা হলো:-
>>> মুসলিম শব্দের শাব্দিক বিশ্লেষণ <<<
মুসলিম শব্দটি ( ﻝ ﺱ ﻡ ) ধাতু থেকে এসেছে। মুসলিম শব্দের
Past form হল )ামালসআ( ﺃَﺳْﻠَﻢَ এবং এটি Verb (form IV) যার
অর্থ হল আত্মসমর্পণ করা, অনুগত হওয়া, সমর্পন করা,
সপে দেওয়া, আনুগত্য করা, নির্দেশ মানা, ইসলাম গ্রহন
করা। শব্দটির Verbal noun হল ﺇِﺳْﻠَﺎﻡ (ইসলাম) যার অর্থ
সমর্পণ, আত্মসমর্পণ, বশ্যতা, ইসলাম গ্রহন। এবং শব্দটির
Active participle ﻣُﺴْﻠِﻢ (মুসলিম) যার অর্থ আত্মসমর্পণকারী,
অনুগত, আজ্ঞাবহ, মুসলিম। কুরআনে- )মালসআ( ﺃَﺳْﻠَﻢ শব্দটি ১৪
(চৌদ্দ) বার, ﺇﺳْﻼﻡ (ইসলাম) শব্দটি ৮ (আট) বার
এবং ﻣُﺴْﻠِﻢ মুসলিম শব্দটি ৪২ (বিয়াল্লিশ) বার এসেছে।
একবচন মুযাক্কার (পুংলিঙ্গ) ﻢِﻠْﺴُﻣ (মুসলিম) শব্দটি ২ (দুই)
বার এসেছে, একবচন মুয়ান্নাস (স্ত্রীলিঙ্গ) ﻣُﺴْﻠِﻤَﺔ
(মুসলিমা) শব্দটি ১ (এক) বার এসেছে, দ্বিবচন মুযাক্কার
(পুংলিঙ্গ)ﻞْﺴُﻣِﻣَﻴْﻦ (মুসলিমাইন) শব্দটি ১ (এক) বার এসেছে,
বহুবচন মুযাক্কার (পুংলিঙ্গ) ﻥﻮُﻤِﻠْﺴُﻣ (মুসলিমুন) শব্দটি ১৫
(পনের) এসেছে, বহুবচন মুযাক্কার (পুংলিঙ্গ) ﻣُﺴْﻠِﻤِﻴﻦ
(মুসলিমিন) শব্দটি ২১ (একুশ) বার এসেছে, বহুবচন মুয়ান্নাস
(স্ত্রীলিঙ্গ) ﻣُﺴْﻠِﻤَﺎﺕ (মুসলিমাত) শব্দটি ২ (দুই) বার
এসেছে।
>>>> আত্মসমর্পণকারী মুসলিমের সংজ্ঞা – পবিত্র কুরআনের
আলোকে <<<<
(১) যারা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে তারাই মুসলিম
এবং যারাই কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরন করে তারাই
আহলে হাদীস তথা আত্মসমর্পণকারী মুসলিম যেহেতু তারাই
রাসূল (ﷺ) ও তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী। তাই আল্লাহ
সুবহানুতালা এ প্রসঙ্গে তাদের সম্বন্ধে পবিত্র
কুরআনে বলেছেনঃ- (হে নবী) যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক
করে, তবে তুমি বলে দাও, ‘আমি নিজেকে আল্লাহর নিকট
আত্মসমর্পণ করলাম এবং আমার অনুসারীরাও’ আর
যাদেরকে কিতাব
দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে তুমি বলে দাও,
‘তোমরা কি আত্মসমর্পণ করেছ’? অতঃপর যদি তারা আত্মসমর্পণ
করে, তাহলে অবশ্যই তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে, আর
যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার দায়িত্ব শুধু
(দাওয়াত) পৌঁছিয়ে দেয়া আর আল্লাহ বান্দাদের
সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। আলে-ইমরান, ৩/২০
(২) আল্লাহ সুবহানুতালা পবিত্র
কুরআনে আত্মসমর্পণকারী মুসলিম সম্বন্ধে আরও বলেছেন: “আর
তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে? যে আল্লাহর
দিকে আহবান করে আর সৎকর্ম করে এবং বলে, নিশ্চয়
আমি আত্মসমর্পণকারীদের/অনুগতদের (মুসলিমদের)
অর্ন্তভুক্ত। সূরা ফুসসিলাত, ৪১/৩৩।”
(২) আল্লাহ সুবহানুতালা পবিত্র কুরআনে আরও
বলেছেন:-“তুমি বল, হে আহলে-কিতাব, তোমরা এমন বাণীর
দিকে এস, যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান, তা এই যে,
আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করব না আর
কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করব না এবং একমাত্র
আল্লাহকে ছাড়া কাউকে রব হিসাবে গ্রহণ করব না অতঃপর
যদি তারা বিমুখ হয় তাহলে বল দাও, তোমরা সাক্ষী থাক যে,
নিশ্চয় আমরা (আল্লাহর নিকট) আত্মসমর্পণকারী/অনুগত
(মুসলিম)। সূরা আলে-ইমরান, ৩/৬৪ ।”
সুতরাং, আলোচনায় বলা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে যারা রাসূল (ﷺ)
ও তাঁর অনুসারী তারাই আল্লাহর নিকট
আত্মসমপর্ণকারী মুসলিম তথা আহলে হাদীস বা আহলুল
হাদীস।
>>>> মুসলিমের প্রকারভেদ <<<<
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় বলা যায় যে, মুসলিম দু’প্রকার।
নিম্নে তা তুলে ধরা হলোঃ-
১. আত্মসমর্পণকারী এবং ২. সীমালংঘনকারী বা বিপদগামী।
অতএব, সূরা হা-মীম-সিজদার ৩৩নং আয়াত
অনুযায়ী নিজেদেরকে শুধু নামধারী মুসলিম বললেই
হবে না বরং রাসূল (ﷺ) ও তাঁর অনুসারী হতে হলে মুমিন
বান্দার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কাজ করতে হবে তবেই
আত্মসমর্পণকারী মুসলিম হওয়া যাবে তথা নিজেকে প্রকৃত
আহলে হাদীস হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন
করা যাবে তথা আত্মসমর্পণকারী মুসলিম হিসাবে পরিচয়
দেয়া সম্ভব হবে।
আর নিশ্চয় আমাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক
আছে আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) আর কিছুসংখ্যক
আছে সীমালঙ্ঘনকারী তবে যারা আত্মসমপর্ণ করেছে তারাই
সঠিক সত্যপথ বেছে নিয়েছে আর
যারা সীমালঙ্ঘনকারী তারা জাহান্নামের ইন্ধন। আল-জিন,
৭২/১৪-১৫
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায়, মুসলিম দাবী করলেই
মুসলিম হওয়া যায় না। যে আল্লাহর নিকট আত্মসমপর্ণ
করে সেই মুসলিম। যে আল্লাহর প্রতিটি বাণী মেনে নেয়
অর্থাৎ কুরআনের প্রতিটি আয়াতের কাছে আত্মসমপর্ণ
করে সেই হল আত্মসমপর্ণকারী বা অনুগত মুসলিম।
আমাদেরকে সম্পূর্ণ কুরআনের উপর ঈমান আনতে হবে। আর
যে আল্লাহর নিকট নিজেকে আত্মসমপর্ণ করল না, অর্থাৎ
কুরআনে কাছে মাথা নত করল না; কুরআনে কিছু আয়াত স্বীকার
করল আর কিছু আয়াত অমান্য করল তারা হল
সীমালঙ্ঘনকারী মুসলিম।
আল্লাহ সুবহানুতালা পবিত্র কুরআনে তাই বলেছেন-
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস কর আর কিছু
অংশকে অবিশ্বাস করবে? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ
করে তাদের দুনিয়ার
জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তবে কী প্রতিদান হতে পারে?
এবং কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিন শাস্তির
মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে আর তোমরা যা করছ
সে সম্পর্কে আল্লাহ গাফেল নন। এরাই আখিরাতের
বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে ক্রয় করেছে, অতএব তাদের
থেকে আযাব হালকা করা হবে না আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও
হবে না। আল-বাকারা, ২/৮৫-৮৬
পরিশেষে উপরের পর্যালোচনা থেকে বলা যায় যে, হাদীস
বললে, আল্লাহর বাণী ‘কুরআন’ ও রসূলের বাণী ‘হাদীস’ উভয়েই
বুঝায়। আহল (ﻞْﻫَﺃ) অর্থ অনুসারী আর হাদীস (ﺚﻳِﺪَﺣ) এর অর্থ
হল বাণী। আহলে হাদিস [ ﺃَﻫْﻞِ ﺣَﺪِﻳﺚ ) বা আহলুল হাদিস [ُﻞْﻫَﺃ
]ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚ শব্দের অর্থ হাদিসের অনুসারী। যারা আল্লাহর
হাদীস ‘কুরআন’ ও রসূলের সহীহ হাদীসের একনিষ্ট
অনুসারী তারাই হল আহলে হাদীস বা আহলুল হাদিস। আবার
সুন্নাহর অপর নাম হাদীস তাই যারা আহলুস্সুন্নাহ তারাই
আহলুল হাদীস।
আহল অর্থ অনুসারী এবং হাদীস (ﺚﻳِﺪَﺣ) এর শাব্দিক অর্থ হল
কথা, বাণী, কথাবার্তা, আলোচনা, কথিকা, সংবাদ, খবর,
কাহিনী। রসূল (ﷺ) এর কথা, কর্ম, সম্মতি, চারিত্রিক
গুণবলীকে হাদিস বলা হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হাদীছ
(কুরআন) রাসূলের হাদীস (সহীহ হাদীস)অনুসরণ
করে তাকে আহলুল হাদীস বলা হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তিন শ্রেণীর লোক দ্বারা সর্বপ্রথম জাহান্নাম উদ্বোধন

♪♪তিন শ্রেণীর লোক দ্বারা সর্বপ্রথম জাহান্নাম উদ্বোধন করা হবে। যথাঃ (ক) শহীদ। (খ) আলেম এবং (গ) দানবীর। ★হাদিস: তিন শ্রেণীর লোক সর্বপ্রথম জাহান্নামে যাবেঃ প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি, নবীজী বলেন:কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাদের বিচার করা হবে, শাহাদত বরণকারী একজন লোক, তাকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ প্রদত্ত্ব যাবতীয় নেয়ামত সম্পর্কে জ্ঞাত করা হবে সে সব নেয়ামতকে চিনে বা মেনে নেবে। তখন তাকে বলা হবে: এসব নেয়ামতের পরিপ্রেক্ষিতে তুমি কি কি আমল করেছ? বলবে: আপনার তরে লড়াই-জিহাদ করেছি এবং শহীদ হয়ে গিয়েছি। বলা হবে: তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি লড়াই করেছ এজন্য যে, লোকেরা তোমাকে বীর-বাহাদুর বলবে। তাতো বলা হয়েছে। অত:পর তার ব্যাপারে রায় ঘোষণা করা হবে এবং তাকে চেহারার উপর ভর দিয়ে টেনে নিয়ে (যাওয়া হবে এবং) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। →দ্বিতীয় পর্যায়ে, আলেম ব্যক্তি যে নিজে দ্বীনী ইলম শিক্ষা গ্রহণ করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কোরআন পড়েছে। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং প্রদত্ত নেয়ামত সম্পর্কে জ্ঞাত করা হবে। সে সব নেয়ামত...

ভ্রান্ত আলেম

ভ্রান্ত আলেম ভ্রান্ত আলেমঃ- নবি(স) বলেন,আমি আমার উম্মতের একটি বিষয়কে দজ্জালে চেয়ে ও বেশী ভয় করি। আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল সেটা কি? তিনি বল্লেন,বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট আলেম(সহি মুসলিম:৬,৭ মুসনাদে আহমদ:২১৬২১,২১৬২২ তাবরানী:৭৬৫৩)। আলেমগন(ভাল) ইসলামের পাহরাদার বল্লেও, দুর্ভাগ্য যে বর্তমানে কিছু লোক (পীর নিয়ন্ত্রিত) মাদ্রাসায় সাজেশান পড়ে আলেম সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে, কিন্তু তারা কুরআন সম্পূর্ণ পড়ে না,বিধায় আমাদের সমাজে পথভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত আলেম বেড়ে গেছে। তাদের অজ্ঞতায় সৃজিত জাল-যঈফ হাদিসের জন্য সাধারণ মুসলিম শির্ক ও বিদাআত চিনতে পারছেন না। এরাই বর্তমানে বলে বেড়ায় "ধর্ম বুঝা কঠিন, মাদ্রাসা না পড়লে কোন ভাবেই ধর্ম জানা যায় না তারচে তারা যা বলে তা অন্ধ ভাবে অনুসরণ করতে"। প্রকৃত পক্ষে- এটি সহজ ও দলিল ভিত্তিক ধর্ম।এটা মানতে কুরআন ও সুন্নাহ(in to to) অনুসরণ করতে হয়। কোন পীর,ঈমাম কিংবা আলেম এর স্বপ্ন,ইচ্ছা,গনতন্ত্র, ভাল লাগা, না লাগার উপর ইসলাম নির্ভর করে না। আল্লাহ্‌ বলেন, আলেমদের অন্ধ অনুসরণ করা হারাম(সুরা নাহল:১৬/৪৩,সুর আ"রাফ:৭/৩, সুরা আহযাব:৩৩/৬৭) [Mahbubul ...

হকপন্থী দল কারা ?”

হকপন্থী দল কারা ?” সওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হকপন্থী দল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, "চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হকের উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে ।” (সহীহ মুসলিম ‘ইমারত’ অধ্যায়-৩৩, অনুচ্ছেদ-৫৩, হা/১৯২০; ফাৎহুল বারী হা/৭১ ‘ইল্ম’ অধ্যায় ও হা/৭৩১১-এর ভাষ্য ‘কিতাব ও সুন্নাহকে, ‘আঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়; আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ)-কে ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত হক-এর উপরে একটি দল টিকে থাকবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, -“তারা যদি ‘আহলে হাদীস’ না হয়। তাহ’লে আমি জানি না তারা কারা ?” (তিরমিযী হা/২১৯২; মিশকাত হা/৬২৮৩-এর ব্যাখ্যা; ফাৎহুল বারী ১৩/৩০৬ পৃঃ, হা/৭৩১১-এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০-এর ব্যাখ্যা; শারফু আসহাবিল হাদীস পৃঃ ১৫।) ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকিম(মৃঃ ৪০৫ হিঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এই মন্তব্য করে ভালোই করেছেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকার সেই বিজয়ী দলটি হল ‘আসহাবুল হাদিস’। (ম...